সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন খালেদা জিয়া।
গত শুক্রবার রাতে বান্দরবন জেলার নাইক্ষংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের চাকপাড়া গ্রামের একটি বৌদ্ধ বিহারে ধাম্মা ওয়াসা মং শৈ উ চাককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বৌদ্ধ ভিক্ষু ধাম্মা ওয়াসা মং শৈ উ চাক হত্যায় তীব্র ‘নিন্দা, ক্ষোভ ও ধিক্কার’ জানান। তিনি নিহতের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, “ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই বন্য প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই সমস্ত পৈশাচিক ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এটি বিরোধী দলের প্রতি তাদের স্বভাবসূলভ অন্ধ হিংসার বহিঃপ্রকাশ। তাদের বক্তব্যের ধরন দেখে মনে হয়-তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে উল্লিখিত হত্যাকাণ্ডগুলোয় প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের আস্তানা ধ্বংস করে তাদের পাকড়াও করা নয়, বরং এই সমস্ত বর্বর হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা, আর সেজন্যই চটজলদি বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানো হয়। এই কারণেই কাণ্ডজ্ঞানহীন জঙ্গিগোষ্ঠী উৎসাহিত হয়ে প্রাণবিনাশী কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে।”
বিবৃতিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, “বিদেশি হত্যা থেকে শুরু করে শিয়া সম্প্রদায়, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মগুরুদের ওপর নৃশংস আক্রমণ ও সিরিজ হত্যা সরকারের ভ্রুক্ষেপহীনতার কারণেই ক্রমাগতভাবে চলমান থাকছে। আমাদের ভূখণ্ডের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতির পরম্পরায় সম্প্রীতি ও পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছাবোধ এক অনবদ্য জাজ্বল্যমান উপাদান, সেখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও সংঘাতের কোনো অধ্যায় নেই। এটি একটি অতি সাম্প্রতিক প্রপঞ্চ।”
খালেদা জিয়া আরো বলেন, “যে সরকার ভিন্নমতকে দমন করতে, সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্দয়ভাবে ব্যবহার করে চলেছে, সে সরকার নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে লাশ আর রক্তপাতকে চিরস্থায়ী সঙ্গী করে নিতে যে দ্বিধা করবে না, তা বলাই বাহুল্য।”
“জনমতকে তাচ্ছিল্য করে প্রধানমন্ত্রীর জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা, দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি ও একগুঁয়েমি ও নিজ দলের লোকদের অনাচারকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণেই দেশে অপরাধকর্ম ও দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের নির্বিকার আচরণের কারণেই একের পর এক হত্যাকাণ্ডগুলোতে দেশের রাজনৈতিক কুজ্ঝটিকা ঘন ও রহস্যময় হয়ে উঠেছে।”
খালেদা জিয়া বলেন, “দেশে জঙ্গিদের অস্তিত্ত্ব নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও জনমনে এক বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলে সরকার কোনো নীল নকশা ধরে এগোচ্ছে ? ভোটারবিহীন সরকার দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। আর সেজন্যই তারা দানবীয় চক্রান্ত এঁটে চলেছে। কারণ আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় উৎসাহী একটি দল। মানব সভ্যতা বিনাশী মতাদর্শে বিশ্বাসী জঙ্গিদের উৎপাত শুরু হয় আওয়ামী আমল থেকেই। আমরাই ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করি।”
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “এ দেশ কেন জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হলো ? আওয়ামী শাসনামলেই কীভাবে বেআইনি, সভ্যতা, প্রগতি বিরোধী অশুভ জঙ্গিগোষ্ঠীর বিচরণ এত তীব্র হলো? কেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ও ধর্মগুরুদের জীবন যাচ্ছে, আর কতদিন সাধারণ জনগণকে ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হবে, এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ক্ষমতা সরকার হারিয়ে ফেলেছে। কারণ গণবিরোধী, ভোটারবিহীন সরকার আসল কাজের পরিবর্তে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই বেশি ব্যস্ত।”
পাঠকের মতামত: